সেহরি ও ইফতারের মেন্যুতে কী রাখবেন গর্ভবতী মায়েরা
রোজা ফরজ ইবাদতগুলোর একটি। তবে মা এবং অনাগত সন্তানের ঝুঁকি বিবেচনায় ইসলামে গর্ভবতী মায়েদের রোজা পালনে ছাড় রয়েছে। এরপরও গর্ভবতী মা যদি রোজা রাখতে চান, তাকে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে।
ডক্টর টিভির সঙ্গে আলাপকালে গর্ভবতী মায়েরা সেহরি এবং ইফতারের মেন্যুতে কী রাখতে পারেন সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন ভেল্লা লেজার কেয়ার’র পুষ্টিবিদ ডা. নাহিদা আহমেদ।
তিনি বলেন, রোজ রাখলে কিছু নিয়ম মেনে চললে গর্ভবতী মায়েদের ৩০টি রোজাই পালন করা সম্ভব। প্রথম বিষয় হলো- এজন্য গর্ভবর্তী মাকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে।
ডা. নাহিদা বলেন, ইফতারের সময় প্রথমে অনেক বেশি পানি পান না করে অল্প অল্প করে বারে বারে পানি পান করতে হবে। সহজে হজম এই জাতীয় খাবারগুলো যেন ইফতারের মেন্যুতে থাকে। কারণ দীর্ঘ সময় রোজা থাকার পরে অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বা অ্যাসিডিটি হতে পারে।
তিনি বলেন, ইফতারে অবশ্যই পাতলা জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন- ভেজিটেবল স্যুপ, চিকেন-ভেজিটেবল মিক্স স্যুপ, দই দিয়ে চিড়া অথবা বিভিন্ন ফল দিয়ে তৈরি করা সালাদ।
ডা. নাহিদা বলেন, আমরা সাধারণত রমজান মাসে ছোলা খেতে পছন্দ করি। এ জাতীয় খাবারগুলো অ্যাসিডিটি তৈরি করতে পারে। এজন্য এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। আর যদি ছোলা খেতেই হয়, তাহলে এটি সিদ্ধ করে সালাদ মিক্স করে খাওয়া যেতে পারে। অথবা ছোলা সারারাত ভিজিয়ে রেখে অঙ্কুরোদগম হলে তারপরে সেই ছোলাটি খাওয়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো।
তিনি বলেন, সাধারণত আমরা ইফতারের পর রাতের খাবার এড়িয়ে চলতে চাই। কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে ক্যালরির চাহিদা বেড়ে যায়। সেজন্য অবশ্যই রাতের খাবার খেতে হবে। অন্যথায় দৈনিক ক্যালরির চাহিদা পূরণ হবে না।
এই পুষ্টিবিদ বলেন, রাতের খাবার হিসেবে দই-চিড়া, মুড়ি অথবা সিদ্ধ ডিম বা এক গ্লাস দুধও রাখা যেতে পারে। দুধ অবশ্যই কুসুম গরম হতে হবে। কারণ একেবারে গরম খেলে কিন্তু অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে- রাতে খাবার পরে গর্ভবতী মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কারণ গর্ভকালীন সময়ে পানির চাহিদাও বেড়ে যায়। এই গরমের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে সেক্ষেত্রে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
ডা. নাহিদা বলেন, সেহরিতে অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। সেহেরির পরিমাণ হবে অন্যান্য দিন দুপুরের খাবারে যতটুকু খাবার গ্রহণ করি, ঠিক সেই পরিমাণ।
তিনি বলেন, সেহরিতে ধীরে ধীরে হজম হয় এই জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন- জটিল শর্করা লাল চাল, লাল আটার তৈরি খাবার, বিভিন্ন মৌসুমি সবজি, মাছ বা মাংস এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার যেন খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত থাকে।
এই পুষ্টিবিদ বলেন, সেহরিতে ১/২টি খেজুরও খাওয়া যেতে পারে। কারণ, খেজুর থেকে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি পাওয়া যায়। এক গ্লাস দুধও রাখা যেতে পারে সেহরিতে।
তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ তৃষ্ণা পাবে না ভেবে সেহরিতে অনেকে অতিরিক্ত পানি পান করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত পানি পান করলে বমি বমি ভাব হতে পারে। এজন্য পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
ডা. নাহিদা বলেন, সর্বোপরি শারীরিক জটিলতা নির্ণয় করে একটি আদর্শ খাবার তালিকা তৈরি করে গর্ভবতী মাকে রোজা থাকতে হবে। এ বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।