দ্রুত রূপ বদল, চিনতে পারছে না দেহ
অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন দ্রুত তার রূপ পরিবর্তন করায় শরীর তাকে চিনতে পারছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শনাক্ত নতুন ধরনকে কিছু ক্ষেত্রে শরীর চিনতে পারলেও প্রতিরোধ করার সুযোগ পাচ্ছে না। এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত অুস্থ হয়ে পড়ছেন।’
ডক্টর টিভির সাথে আলোচনায় এসব কথা বলেন ডা. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। প্রতিনিয়ত এটি তার রূপ বদল করেছে। প্রথম শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটি প্রায় ১২ হাজার ৭০০ বার রূপ বদল করেছে। এদের বেশিরভাগ ধরন ততটা গুরুতর না হলেও কয়েকটি খুবই মারাত্মক। বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া ইউকে স্ট্রেইন মারাত্মক শ্রেণীর অন্তর্গত।’
ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘বর্তমানে ইউকে ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি সাউথ আফ্রিকান, সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ান ও ব্রাজিল ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপকহারে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এগুলো নিজেদের এমনভাবে পরিবর্তন করে ফেলতে সক্ষম যে, আমাদের দেহ তাকে চিনতেই পারছে না। ফলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে শরীর চিনতে পারছে। কিন্তু এটি এত দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করছে যে, প্রতিরোধ করার সুযোগ পাচ্ছে না শরীর।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে শনাক্ত হওয়া ইউকে ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি শক্তিশালী। এটি আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করে দ্রুত নিজেকে তার চেয়ে শক্তিশালী করে তুলছে। এজন্য আক্রান্ত হলে খুব দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বড় বিষয়, নতুন ধরন শরীরের সব অঙ্গ-প্রতঙ্গে আক্রমণ করতে সক্ষম। ইউকে ভ্যারিয়েন্টের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি খুব দ্রুত ফুসফূসের কোষগুলোকে আক্রান্ত করছে। এতে রোগীর নিউমোনিয়া, সিভিআর, এআরডিএস জটিলতাসহ শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার নতুন ধরনে আক্রান্তের হার ৭০ গুণের বেশি। আর মৃত্যুহার প্রায় ৩০ শতাংশ।’
ভ্যারিয়েন্ট বা পরিবর্তনের ব্যাখ্যায় এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত নাম হচ্ছে সার্চ কোভি-২। আর এর ফলে সৃষ্ট রোগের নাম হচ্ছে কভিড-১৯। আমাদের শরীরে ভাইরাস তার নির্দিষ্ট প্রোটিনের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায়। ভাইরাসের এ প্রোটিন কোষ তৈরির জন্য একটি আরএনএ জিনের দরকার। শরীরে প্রবেশের পর ভাইরাসটি মানুষের কোষ থেকে উপাদান নিয়ে নিজের প্রোটিন কোষ তৈরি করে ফেলছে এবং অন্য কোষগুলোকে আক্রান্ত করছে। ফলে শরীরের কোষগুলো বুঝতে না পারায় প্রতিরোধও করতে পারছে না।’
করোনাভাইরাস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখাসমূহ
► করোনার ‘বাংলাদেশি ধরনের’ ইঙ্গিত
►টিকা নেওয়ার পর আক্রান্তদের করোনার তীব্রতা কম
►সংক্রমণে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলল ভারত