জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি কার জন্য ভালো?
কেউ সদ্য বিয়ে করেছেন, একটু দেরিতে সন্তান নেবেন। কারও আবার একটি সন্তান আছে, পরের সন্তান নেওয়ার আগে কয়েক বছরের বিরতি চান। কেউ হয়তো ইতিমধ্যে দুই সন্তানের বাবা-মা, তাই জন্মনিয়ন্ত্রণে স্থায়ী কোনো পদ্ধতিতে যেতে চান। কেউ চান প্রসব-পরবর্তী সময়ের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, কেউ আবার চান গর্ভপাত-পরবর্তী সময়ে।
জন্মনিয়ন্ত্রণের নানা রকমের পদ্ধতি আছে। তবে একেক দম্পতির জন্য একেক রকম পদ্ধতি ভালো। সবার চাহিদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ পরামর্শ বা কাউন্সেলিং, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক পরিবার পরিকল্পনাসেবার দরকার হয়। সবার জন্য একই পদ্ধতি কখনো প্রযোজ্য হতে পারে না। এসব বিষয়ে ডা. তানিয়া রহমান মিতুলের সঞ্চালনায় ডক্টর টিভির সাথে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের গাইনী অ্যান্ড অবস বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফাতেমা রহমান ও স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, ওজিএসবি অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান।
ডক্টর টিভি: আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের কি কি ধরনের পদ্ধতি আছে?
অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান: জন্মনিয়ন্ত্রণে পদ্ধতি দুই রকমের হয়। একটা হয় স্বল্পমেয়াদি আর একটা হয় দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদির ভেতর আমরা যে হরমোনাল গুলা বলে থাকি তার মধ্যে যেটা মুখে খাবার বড়ি এটা খুব সাধারণ ভাবে ব্যবহার করে।এছাড়াও স্বল্পমেয়াদির ভেতর আছে ইঞ্জেকশন যেটা মাসে মাসে নিয়ে থাকে। এর বাইরেও কনডম নিয়ে থাকে। আর দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির ভেতর আছে ৩ মাসের জন্য ইঞ্জেকশন নিতে হয়, একটা আছে হাতে রড দেওয়া হয় যেটাকে ইমপ্লায়েন্ট বলে। আর একটা আছে কয়াপাটি, এটা ৮-১০ বছরের জন্য নেয়া হয়।
ডক্টর টিভি: জন্মনিয়ন্ত্রণের যে বড়ি, এটা কারা খেতে পারবে এবং এর ভেতর কোন ঝুকি আছে কি না?
অধ্যাপক ডা. ফাতেমা রহমান: আমাদের দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়িটা খুবিই কার্যকর এবং জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের একটা ধারণা থাকে যে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলে হয়তো সে যখন বাচ্ছা নিতে চাইবে তখন নিতে পারবে না অথবা তার গর্ভধারণ ক্ষমতা কমে যাবে। এছাড়াও কিছু কিছু নারীদের ধারণা আছে ওজন বেড়ে যেতে পারে এবং অনেক সময় রক্তপাত হতে পারে। এসব ধারণার ফলে আমাদের দেশের নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি থেকে বিরত থাকে। কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি অত্যন্ত নিরাপধ এবং ছোট-খাটো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া বড় ধরনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর সব থেকে বড় সুবিধা হল সব বয়সী নারীরা ব্যবহার করতে পারবে। তবে বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। সেটা ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করতে হবে।
ডক্টর টিভি: ডাক্তার যখন কোন নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি নেয়ার পরামর্শ দেন তখন কী ধরনের পরীক্ষা করা হয় বা তার ব্যবস্থাপনাটা কেমন নিয়ে থাকেন?
অধ্যাপক ডা. ফাতেমা রহমান: সাধারণত যখন কোন নারী স্বল্পমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায়, তখন আমরা তাকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি দিয়ে থাকি। এখন পরীক্ষা আগে আমাদের ইতিহাসটা জানতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি নেয়ার পরামর্শ দেব না। যেমন- দেখতে হবে সেই মুহূর্তে ওই নারী গর্ভবতী কিনা অথবা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে কিনা। এছাড়া তার নিজের অথবা পরিবারে কিছু রোগ থাকে যার ফলে আমরা তাকে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি দেয় না। যেমন তার যদি লিভার জন্ডিস বা লিবারে কোন সমস্যা থাকে, উচ্চ রক্তচাপ থাকে, যদি মাইগ্রেনের ব্যাথা থাকে এবং তার হার্টে যদি কোন সমস্যা থাকে। এসব ইতিহাসগুলো আগে থেকে জেনে নিতে হবে এবং এগুলো থাকলে আমরা কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি নেয়ার পরামর্শ দেব না।
ডক্টর টিভি: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। এই নিয়মগুলো কী কী?
অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িটা নিয়মিত খেতে হয়। যেটা প্রতি রাতে একটা করে খেতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িটা খুব স্বল্পমাত্রায় হরমোন দিয়ে তৈরি করা হয়। কারণ এটি যাতে তার শরীরে সহ্য হয় এবং তার যাতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না হয়।
ডক্টর টিভি: আমরা জানি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতেকটা ঔষধেই কম-বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
অধ্যাপক ডা. ফাতেমা রহমান: যেহেতু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িটা একটা হরমোন সেহেতু বিশেষ করে যারা নতুন করে এটি শুরু করছে তাদের সামান্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। একেকজনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একেক রকম হতে পারে। যেমন কারোর মাথা ঘুরাতে পারে, বমিবমি ভাব হতে পারে, অনেক সময় ওজন বেড়ে যায় বা অনেক সময় হাত-পা একটু ফুলে যেতে পারে এছাড়াও হালকা মাথা ব্যথা হতে পারে। তবে এক-দুই মাস খাওয়ার পর এই সমস্যাগুলো আর থাকে না।
ডক্টর টিভি: ডাক্তার বলেন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি নিয়মিত খেতে হয়। কিন্তু তারপরও তো ভুল হয়ে যায়, তখন আসলে কী করা উচিৎ?
অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান: গত রাতে খাওয়ার কথা কিন্ত ভুলে গেছি এমন যদি ভুল হয় তাহলে তিনি সকালে যখনই মনে পড়বে তখনি সে খেয়ে নেবে এবং আজকে রাতেরটা আবার আজকে রাতে খেয়ে নেবে। কিন্তু কেউ যদি পরপর দুই রাতে ভুলে যায় তাহলে কিন্তু এর আর কার্যকারিতা থাকবে না। এখন তার বড়ি যদি ৭টা বাকি থাকে তাহলে সেটা শেষ করবে এবং এই ৭দিনের ভেতর যদি সে তার স্বামীর সাথে থাকে তাহলে তখন তাকে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। এরপর আগের ডোজটি শেষ হলে পরবর্তী সপ্তাহ থেকে আবার আগের নিয়মে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি নিয়মিত খেতে থাকবে।
ডক্টর টিভি: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি নিয়ার ক্ষেত্রে কোন বয়সসীমা আছে কিনা সেটি আমাদের দর্শদের উদ্দেশে বলুন।
অধ্যাপক ডা. ফাতেমা রহমান: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সময় কম বয়সী মেয়েদের খেতে বলছি। আর বলা হচ্ছে ৩৫ বছর বয়সের নারীর জন্য তার ইতিহাস জেনে নিতে হবে এবং কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। এসবের পর তাকে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি গ্রহণ করতে হবে। আর যারা অনেক দিন ধরে (যেমন: ১০ বছরের বেশি দিন ধরে) জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাচ্ছেন তাদেরকে আমরা অন্য পদ্ধতিতে যেতে বলতে পারি।
ডক্টর টিভি: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার ফলে মেয়েদের মাসিক কি কমে যায়?
অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান: এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাদের মাসিকের পরিমাণটা একটু বেশি তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে মাসিক পরিমাণটা কমে যায়। এখানে যাদের মাসিকের পরিমাণটা কম তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি না নিয়ে অন্য পদ্ধতিতে যাওয়া উচিৎ।
অনুলিখন: আবু বক্কার সিদ্দিক