বুকের জ্বালাপোড়া ও হার্টের সমস্যা বুঝার উপায়
ছবিটি প্রতীকী ব্যবহার করা হয়েছে।
বুকের মধ্যে বিভিন্ন কারণে জ্বালাপোড়া হতে পারে। খাবার গ্রহণের পর স্টমাকের সমস্যার কারণে আবার অনেকের ক্ষেত্রে হ্রদরোগের কারণেও জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে। সম্প্রতি ডক্টর টিভিতে বুক জ্বালাপোড়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ। তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন ডা. সানজিদা হোসেন পাপিয়া
বুকের জ্বালাপোড়া আসলে কি?
অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ: বুকের জ্বালাপোড়া কথাটা যখনই উচ্চারণ করি তখনই ভাবি এটা কি হার্টের সমস্যা না খাদ্য নালির সমস্যা। তবে আমরা ডাক্তাররা রোগীর সাথে কথা বলে বুঝতে পারি যে এটা কিসের সমস্যা।
খাদ্য নালিতে খাবার নিচের দিকে না গিয়ে যখন উপরের দিকে চলে আসে এবং এর ফলে যে উপসর্গ দেখা দেয় সেটি হল বুকের জ্বালাপোড়া। বুকের মধ্যখানে যে হাড় থাকে এখানে যে জ্বালাপোড়া হয় এবং মুখে পানি আসা, মুখ টক হয়ে যাওয়া এরকম হলে আমরা মনে করি যে বুকে জ্বালাপোড়া হচ্ছে।
হার্টের ব্যথা এবং বুকের জ্বালাপোড়ার ব্যথা- এরমধ্যে পার্থক্য কী?
অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ: মনে করেন একজন ব্যক্তির বয়স ৪০ অথবা ৫০ বছর, তার ডায়াবেটিস আছে, ব্লাড প্রেশার আছে, কোলেস্টেরল আছে এরকম হলে আমরা প্রথমে মনে করবো হার্টের সমস্যা আছে। হার্টের সমস্যা হলে রোগী কিন্তু দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বুকের উপর রেখে বলবে আমার এখানে ব্যথা হচ্ছে, আমি শ্বাস নিতে পারছি না ইত্যাদি সমস্যা হচ্ছে বলবে।
আর যদি গ্যাস্ট্রিকের কারণে হয় তাহলে হাতদুটো নাড়াতে নাড়াতে বলবে আমার বুক জ্বলে যাচ্ছে, শ্বাস নিতে পারছি না ইত্যাদি বলবে। তারপরও যদি কারো বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে আমরা বলি হ্রদ রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে। তারপর তিনি দেখেশুনে ট্রিটমেন্ট দিবেন।
গ্যাস্ট্রিক কিংবা লিভারের সমস্যার কারণে অনেকে বলেন তিতা ঢেকুর উঠে; এটিকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা দিবেন?
অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ: ঢেকুর আসা একটি সাধারণ সিম্পটোম। যার কোন রোগ নেই তারও কিন্তু এটি হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু রোগ আছে যেগুলোতে এই ঢেকুর আসাটা বেশি হয়।
যদি কারো বেশি হয় তাহলে তাকে অবশ্যই আমলে নিতে হবে। এটি কিন্তু অনেক রোগে হয়ে থাকে- লিভারের রোগ, পিত্ত থলির রোগসহ নানা রোগে এই ঢেকুর আসতে পারে। তবে আমরা এই ঢেকুর আসার সাথে অন্য উপসর্গগুলো চেনার চেষ্টা করি। তখন আমরা চিন্তা করি এটি খারাপ না ভালো। ঢেকুর মানে খারাপ না।
বুকের জ্বালাপোড়া হলে ঠিক কোন সময়ে চিকিৎসকের নিকট যাওয়া উচিৎ?
অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ: প্রথমেই বলি সিম্পটোম হলে অবশ্যই তাকে রোগগুলোর সাথে রিলেট করতে হবে এটা কি জন্য হচ্ছে। অনেকের ওজন বেশি থাকে যার জন্য ঠিকমতো কাজ করে না করে স্টমাক, পিত্ত থলি থেকে খাদ্য উপরের দিকে চলে আসে এইজন্য আমরা তাকে ওজন কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি।
অনেক সময় ওষুধ দিয়ে কমানো গেলেও এটা স্থায়ী সমাধান না। আবার অনেক সময় দুধ জাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার অথবা অস্বাস্থ্যকর খাবার বা বাইরের খাবার গ্রহণের মাত্রা বেশি হলে এগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। পেটভর্তি করে খাবার খাওয়া যাবে না। সবসময় পেটের ওয়ান থার্ড ফাঁকা রাখতে হবে এবং টু থার্ড খেতে হবে। ওয়ান থার্ড পানি খাওয়া তারমধ্যে আমাদের মুসলমান ধর্মে এরকম একটা ডিরিকশন দেয়া আছে।
আমরা বলি খাওয়ার সাথে সাথে আপনি পানি খাবেন না, পানি খাবেন খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে। আরেকটা কথা হলো- খাওয়ার সাথে সাথে আপনি শোবেন না শোবেন খাওয়ার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পরে। শোয়ার আগে আর কিছু খাবেন না তাহলে আপনার সিম্পটোমগুলো কম হবে।