দাঁতের ক্ষয়রোগ হওয়ার কারণ কী?

ডা. সানজিদা হোসেন পাপিয়া
2020-11-11 00:31:34
দাঁতের ক্ষয়রোগ হওয়ার কারণ কী?

শরীরের সবচেয়ে শক্ত জিনিস দাঁতের এনামেল।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন দেশের কিংবদন্তি দন্ত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ তামিজুল আহসান রতন।  গত বছর ডক্টর টিভিকে দেয়া তার বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়ে।  গুরুত্বপূর্ণ ওই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য জন্য প্রকাশ করা হলো।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. সানজিদা হোসেন পাপিয়া।  গ্রন্থনা করেছেন আমিনুল ইসলাম

ডক্টর টিভি: দাঁতের ক্ষয়রোগ বলতে আসলে কী বোঝায় এবং এটা হওয়ার পেছনের কারণ কী?

ডা. তামিজুল আহসান রতন: ধন্যবাদ, খুব সুন্দর প্রশ্ন। অনেকের একটা প্রশ্ন থাকে, চোখের কলেজ নাই, মাথার কলেজ নাই, কিন্তু ডেন্টাল কলেজ আছে, আমরা এতটা সময় চার বছর কী পড়ি? তারমধ্যে ক্ষয় একটা মারাত্মক সমস্যা। এটা হচ্ছে একটা গেটওয়ে অফ এনি ইনফেকশন ইন দ্যা বডি। তো মুখের মধ্যে প্রথম রোলটা প্লে করে দাঁত, জিভ, এসব জিনিস। এখন দাঁত যদি সঠিক না রাখা যায়, তাহলে ও দাঁত দিয়ে কিভাবে ফাংশনাল হব, কিভাবে অ্যাস্থ্যাটিক হবে আমাকে। আমার সামনে যদি দাঁত না থাকে , যাদি সামনের দাঁত পড়ে যায় তাহলে দেখতে কেমন লাগবে? যদি পেছনের দাঁতগুলো ক্ষয় হয়ে যায়, যদি ঠিকমত না থাকে তাহলে আমি কিভাবে খাব।

দাঁতের আসলে অনেক কাজ, দাঁত যে শুধু দেখতে সুন্দর তা না, শুধু যে চিবানোর জন্য ব্যবহার করা হয় তাও কিন্তু নয়। আমাদের কথা বলা, উচ্চারণ, ভালো লাগা, ভালো দেখা সবকিছুর পেছনে তাদের ভূমিকা আছে।

এখন ক্ষয় বলতে  ইংরেজিতে আমরা বলি ডিকে, আরও যদি আমাদের টার্মে বলি তাহলে ডেন্টাল ক্যারিজ ।  এগুলা কি কি কারণে হতে পারে, এই ডিকে টা, কী কারনে ক্ষয়টা হয়। বিভিন্ন কারণে এই ক্ষয়টা হতে পারে।

প্রথমত আমরা যদি ধরি এটা একটা ক্যারিজ ,এটা একটা ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন, জীবাণুঘটিত।  অর্থাৎ, আমরা যে খাই, সেই খাদ্য কণাগুলো যদি লেগে থাকে, সাধারণত শর্করা জাতীয় আমরা যেটা বলি- ভাত ,রুটি ,নুডুলস , স্টিকি ফুডগুলো যদি দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে থাকে আর ঠিকমত বের হতে না পারে। তাহলে এগুলা ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনটা হয়।

যেমন কেউ যদি রাত্রের বেলা মিষ্টি খেয়ে ঘুমান, দাঁতের ফাঁকে যদি মিষ্টিটা ঢুকে থাকে, তখন আস্তে আস্তে তার এসিড ফরমেশন করবে, ব্যাকটেরিয়ার গ্রোথ বাড়বে।  আস্তে আস্তে দাঁতগুলো ডিকেতে আসবে ।  ডিকেতে আসার পর একটা ক্যাভিটি তৈরি করবে, তার নেট তৈরি করবে।  তার আগে ছোট ছোট কালো স্পট পড়বে।

দেখা গেছে অনেকে বুঝতে পারে না যে তার ক্ষয়রোগ শুরু হয়ে গেছে।  কেন বুঝতে পারে না তার কারণ আছে।‌  ওই যে কালো দাগ তার ভিতরে কিন্তু অনেক গর্ত।

এখন কেন হচ্ছে যদি আমরা দাঁতটাকে নিয়ে চিন্তা করি, দাঁতের উপরের লেয়ারটা এনামেল, তারপরের লেয়ারটা ডেন্টিন, তারপরের লেয়ারটা আল্লাহর দেয়া কনফাইন্ড এরিয়ার মধ্যে ব্লাড ভেসেল বলি, নার্ভ বলি সবকিছুকে কনফাইন্ড, যেগুলো দাঁতটাকে পরিপুষ্ট করছে।

প্রথম লেয়ার ক্ষয় হয়ে গেলে আমরা তেমন কিছু বুঝতে পারি না ওই যে ছোট একটা স্পট, এর ভেতরে যদি আমরা ঢুকে যাই, তাহলে আস্তে আস্তে দেখা যায় একটু সেনসেটিভ হয়।

ঠাণ্ডা-গরম কিছু একটা খেলে, দেখা যায় যে এটা ট্রান্সফার হচ্ছে।  ওই যে নার্ভে আছে যে পাল্ব (অস্পষ্ট) সেখানে ট্রান্সফার হচ্ছে।  তখন সে দাঁতটা সেনসেটিভ হয়ে যাচ্ছে।  

আর এই সেন্সোসাইন একটু হতে হতে এমন একটা পর্যায়ে যায় , এখন সেন্সেশন টার্ন ইনটু পেইন। তখন দেখা গেল একদিন ঠান্ডা কিছু খেলো, ব্যথায় গালে হাত দিয়ে বসে আছে।

কি ব্যাপার দেখা গেল তার মারাত্মক শির শির করছে। টার্নটা নিচ্ছে ওখান থেকে, এটা এক ধরণের ক্ষয়।  এটার চিকিৎসা আছে‌।

অনেকে জানাচ্ছেন যে তার সবগুলো দাঁত সেনসিটিভ হয়ে গেছে।  দেখা গেল কি হয়েছে, তার হলো জেনারেলাইজড ক্ষয়, উপরের দিকে ক্ষয়, বিভিন্ন ধরনের , দাঁতে শিরশির করছে, দাঁতের উপরের লেভেলে থেকে ক্ষয় হয়ে গেছে। আবার কিছুক্ষণ আছে সাইট দিয়ে।

এখন উপরের লেভেলের ক্ষয়টা কেন হয়? দেখা গেল যে ভদ্রলোক বা ভদ্র মহিলা এসে বলতেছে তার শির শির করে, তো তার এই একটা রোগ আছে। একটা রোগ আছে রাত্রে ঘুমে দাঁত কামড়ায়, দাঁত কিড়মিড় করা কিন্তু সে নিজে সেটা বুঝতে পারে না।

পাশে যে থাকে সে ঠিকই বুঝতে পারে সে দাঁত কামড়ায় দাঁত কামড়ায়।  এর কারণেও দাঁত ক্ষয় হতে পারে, আরেক ধরনের ক্ষয় আছে উপরের লেভেলটা , অনেকে পান সুপারি জর্দা এগুলো সারাদিনই চিবাচ্ছে, কিন্তু সে কোন সময় খেয়াল করছে না , দাঁতটা এতো ব্যবহার হচ্ছে যে, তার দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু এটা একটা শরীরের শক্তিশালী অংশ তাই এটা সহজে ক্ষয় হয় না, এটা আস্তে আস্তে হয়।

আমরা জানি, শরীরের সবচেয়ে শক্ত জিনিস এটা, যে কোন অঙ্গের মধ্যে দাঁতের এনামেল। এই যে তার এই ক্ষয়টা যখন সেকেন্ড লেয়ার পার হয়ে যায় তখন সে বুঝতে পারে তার দাঁতগুলো শিরশির করছে, এটার চিকিৎসা আছে।

অনেক মানুষই আছে আমাদের বর্তমান সময়ে সে মাদকাসক্ত।  কেউ আছে নিকোটিন নেয়।  এ ক্ষয়ের কালার আছে,  আমরা কালার দেখে বুঝতে পারি আমরা যে সে মাদকসেবী।

আরো কতগুলো ক্ষয় আছে সে ভুলভাবে ব্রাশ করে, খাবারগুলো যদি লেগে থাকে সে যদি ভুল ব্রাশ করে, কিভাবে ব্রাশ করতে হয় , ব্রাশের কৌশলটা যদি না জানা থাকে, এবং খাবারগুলো যদি দাঁতের সাথে লেগে থাকে, সে যদি ভুলভাবে ব্রাশ করতে থাকে তাহলে খাবারগুলো তার আরও দাঁতের ভিতরে ঢুকে যাবে।

দাঁত পরিষ্কার হলো না উল্টো ময়লাগুলো দাঁতের ভিতরে ঢুকে গেল এবং ক্ষয়রোগ বাড়তে থাকল।

এ ক্ষয় রোগের এক একটা ধরণ আছে, জায়গাভেদে দেখা যায় যে কী কারণে এটা হচ্ছে।  

আমরা যখন দেখি দুই সাইডে তিনটা তিনটা দাঁত।  ডানে তিনটা, বামে তিনটা, উপরে তিনটা, নিচে তিনটা তখন আমরা বুঝতে পারি সে ভুলভাবে ব্রাশ করে।  হয়তো তার ভুল ব্রাশ হতে পারে, আরেকটা স্যালিব্যারি গ্ল্যান্ট থাকে আমাদের, যে সমস্ত লোকের লালাগ্রন্থি অ্যাসিটিক, যেসব জায়গায় লালাগুলো পরে ঠিক ঐ জায়গাগুলো ক্ষয় হয়।

কিছু আছে সাধারণ, পুরো মুখটাতে ক্ষয় হয়।  সেটা কী কারণে হতে পারে, অনেকে অ্যালকোহলিক হয়।  যারা অ্যালকোহলিক হয় তারা অ্যালকোহল মুখে পানির মত খায়।  যে সমস্ত লোকগুলোকে পানির মত পান করে। তাদের দেখা যায় সাধারণ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আবার বয়সজনিত একটা ক্ষত তো আছেই।  


আরও দেখুন: