ধুমপান ও মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়

ডা. কৃষ্ণা রূপা মজুমদার
2021-06-21 01:31:44
ধুমপান ও মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে পরিহার করুন ধুমপান ও মদ্যপান, ফাইল ছবি

যদি প্রতিরোধ করা যায়, স্ক্রিনিং করা যায়, আর্লি ডিটেকশন করা যায় তাহলে এই স্তন ক্যান্সার পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। সেটি স্তন না কেটেই সম্ভব। যদি কোনো জড়তা থাকে সেটিকে বাদ দিতে হবে। যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে অবশ্যই স্ক্রিনিং এর আওতায় আসুন। আর্লি ডিটেকশনের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন। আমাদের বাংলাদেশেই কিন্তু এই স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা পুরোপুরি সম্ভব।

যেভাবে বুঝবেন স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষ হয়েছে:

আমরা চিকিৎসকরা সার্জারীটা করে দিলাম। তারপর সে মাল্টিডিসিপ্লিনারি এপ্রোচের মধ্যে থাকবে, তারমধ্যে মেডিকেল অনকোলজিস্ট যিনি কেমোথেরাপি দেন, রেডিওথেরাপিস্ট যিনি রেডিওথেরাপি দেন। সাধারণত ২১ দিন পরপর একটা করে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। প্রতিবার যখন তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হবে, সেই কেমোথেরাপি দেওয়ার আগে তার কিছু ইনভেস্টিগেশন বা পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে আসলে বুঝা যায়, তার রোগটা সেরে যাচ্ছে কি না। আবার কিছু জেনেটিক ফ্যাক্টর আছে, কিছু টিউমার মার্কার আছে, এগুলোর মাধ্যমেও বুঝা যায়। এই টিউমার মার্কারের রেটটা হয়তো অনেক কমে যায়। তারপর রেডিওথেরাপি দিলে আরোও কমে যায়। আর রিকারেন্স হলে সেটা বুঝার উপায় হচ্ছে ওখানে আবার চাকা হয়ে যাওয়া, ব্রেইনে ছড়িয়ে পড়া। দেখা যাচ্ছে বমি বমি লাগছে, মাথা ঘুরাচ্ছে, হাঁটু ব্যাথা করছে, হাত ব্যাথা করছে। অনেকসময় কাশির সাথে কফ আসে। এধরণের লক্ষণ দেখা গেলে বুঝা যায় রিকারেন্স হয়েছে। সেটারও আলাদা একটা প্রটোকল আছে এবং সেটাও আমরা মেইনটেইন করি।

স্তন ক্যান্সার হলে করোনা ভ্যাকসিন নেয়া কতটা নিরাপদ?

করেনাা ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে বেশ কয়েকটা স্বাস্থ্য নীতিমালা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে ইমিউনো-কম্প্রোমাইজড যারা তাদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না। এখানে ইমিউনো-কম্প্রোমাইজড বলতে আমরা তাদেরকে ধরছি যাদের আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিস আছে, যারা কেমোথেরাপি নিচ্ছে, যারা ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন বা কেমোথেরাপি শেষ করে যারা রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন।

সেক্ষেত্রে যারা এ ধরণের স্টেজে আছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কারণ, ক্যান্সারের ফলে তো এমনিতেই ইমিউনিটিটা অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায়। তো আপনারা এই জার্নিটা পুরোটা শেষ করেন। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি সব শেষ করে পুরোপুরি সুস্থ হলে তখন ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। আর এর আগে পর্যন্ত আপনাদের স্বাস্থ্যবিধিগুলো ভালোভাবে মেনে চলতে হবে।

আর যারা ক্যান্সারের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন তারা তো এখনো সেভাবে ইমিউনো-কম্প্রোমাইজড হয়ে ওঠেন নি। তাদের ক্ষেত্রে করোনার ভ্যাকসিন নিলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ডব্লিউএইচও থেকে এখনো সেরকম কোনো ডকুমেন্টেশন আসে নি যে তারা নিতে পারবেন। তবে যারা স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যেহেতু ভ্যাকসিন নিতে পারছেন না, তাই এই সময়টাতে প্রতিরোধের বিষয়গুলো অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিধিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়:

স্তন ক্যান্সার নিরাময় একজন নারীর প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস বা জীবন-প্রণালীর উপর অনেকটাই নির্ভর করে। সবার আগে নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজেকে ভালোবাসলে, নিজের পরিবারকে ভালোবাসলে একজন নারী নিজেকে সবসময় সুস্থ রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ, তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়া মানে পরিবারের অন্যদেরকে কষ্ট দেওয়া, পরিবারের কাজগুলো করতে ব্যর্থ হওয়া। কারণ, একজন নারীর তার সন্তান, বাবা-মা, স্বামী সবার সাথে জড়িত। আবার সেই নারী যদি চাকরী করেন বা সামাজিক কোনো কাজের সাথে জড়িত থাকেন তাহলেও তার সুস্থ থাকাটা জরুরী।

এজন্য, এই স্তন ক্যান্সারের যে কারণগুলো আছে সেগুলো পরিহার করা। এখন যাদের মাসিক আগে হয়ে যাচ্ছে বা লেট মেনোপজ অর্থাৎ যাদের মাসিক দেরীতে বন্ধ হচ্ছে, সেটার উপরে তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। সেটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। এর বাইরে যেগুলো আছে যেমন, চর্বিজাতীয় খাবারটা কম খেতে হবে, ওজনটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, প্রয়োজনে ব্যায়াম করতে হবে, সুষম খাদ্য খেতে হবে। পরিবারের সবার সুষম খাবারের দিকে নজর দিয়ে নিজে ভালোমতো না খেলে সেটা ঠিক না। দীর্ঘদিন ধরে ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা বারবার ইনজেকশন নেওয়াটাও নারীস্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে, শুধু নারীর উপর এই জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যাপারটা চাপিয়ে না দিয়ে স্বামীকেও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবারকেই বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তারপরে ধূমপান, মদ্যপানের বিষয়টা চলে আসে। আমাদের দেশে অবশ্য এই ধূমপান বা মদ্যপানের প্রবণতা নারীদের মধ্যে অকেটাই কম। তারপরেও যারা স্মোকিং করছে বা অ্যালকোহলিক যারা তাদেরকে বলবো এটা অবশ্যই সংযমের মধ্যে আনতে হবে। আস্তে আস্তে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। এই ধুমপান বা মদ্যপান কিন্তু স্তন ক্যান্সারের একটা অন্যতম কারণ।


আরও দেখুন: