দুইয়ের অধিক সিজারে বাচ্চা নিলে ঝুঁকি বাড়ে
বারবার সিজার করলে বাচ্চা ও মায়ের ঝুঁকি বাড়ে
গর্ভবতী ও সন্তান নিতে আগ্রহী নারীদের নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো শরীরের যত্ন নিলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এ বিষয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন।
ডক্টর টিভি: প্রস্রাবের রঙ হলুদ কেন হয়? এটা কি কোনো রোগ?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: আমরা অনেক ক্ষেত্রে মনে করছি, পানি বেশি খাচ্ছি। তবে আমাদের চিন্তা করার দরকার, এখন পরিবেশটা কেমন। আপনি কতটুকু ঘামাচ্ছেন। সব ধরনের সুস্থতা থাকার পরেও ইউরিনের রঙ ভিন্ন হতে পারে। যদি ডিহাইড্রেশন থাকে। ইউরিনে কনসালটেন্ট বের হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অরেঞ্জ জুস খেলে, কালারফুল খাবার(জুস) খেলে ইউরিনটা হলুদ হতে পারে। প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। আয়রন জাতীয় খাবার, ড্রাগন ফুড খেলেও হতে পারে। তার মানে হলুদ রঙটা খাবারের কারণেও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সিরাপ খেলেও ইউরিনের রঙ পরিবর্তন হয়। কিন্তু এসব কারণে হয়নি, আপনার এমনটা মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আপনার লিভারে কিংবা কিডনিতে কোন সমস্যা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ডক্টর টিভি: জরায়ুমুখে চুলকালে কী সমাধান?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: অনেকের জরায়ুমুখে চুলকায়। ইচিং হয়। হয়তো ইতোমধ্যে চিকিৎসা করিয়েছেন। তারপরেও সমাধান হচ্ছে না। এ ধরণের সমস্যা হলে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই চিকিৎসা দিতে থাকি। এক্ষেত্রে আপনারা যে অবস্থায় থাকেন না কেন দু’জনকেই চিকিৎসার আওতায় আসতে হবে।
ডক্টর টিভি: জরায়ুমুখে ব্যাকটেরিয়া হলে বড় কোনো সমস্যা আছে কি?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: জরায়ু মুখে আমাদের এমনিতে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। সেগুলো আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। তবে যেগুলো প্যাথলজিক্যাল ব্যাকটেরিয়া, সেগুলো সমস্যা করে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।
ডক্টর টিভি: বয়স ২৫ বছর। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ডান পা অবশ হয়ে আসে। এক্ষেত্রে কি করণীয়?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: এটা সাধারণত আপনার ওজনের ওপর নির্ভর করে অনেকক্ষেত্রে। অনেক সময় এক পাশে চাপ দিয়ে থাকার কারণে এমনটা হতে পারে। এক পায়ের উপর দাঁড়ান কিনা, খেয়াল রাখতে হবে। আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন জানা থাকলে সুবিধা হতো। তার পরেও সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন নিউরোসার্জনকে দেখাতে হবে।
ডক্টর টিভি: পরপর দুইবার অ্যাবরশন হয়েছে। পরীক্ষা-নিরিক্ষায় সব রিপোর্টে ভালো। এখন আবার কি প্রেগন্যান্সি হেয়া যাবে?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: পরপর দুইবার অ্যাবরশন এটা সাধারণত বয়সের উপর নির্ভর করে। এটাকে আমরা প্রেগনেন্সি লস বলবো। যখন সে কনস্ট্রাকশন ফ্রি থাকবে, স্বামী-স্ত্রী উভয়কে অনেকগুলো পরীক্ষা করাতে হয়। তাদের পরিবারে কোনো কঠিন রোগের ইতিহাস আছে কিনা? অথবা তার জরায়ুতে সমস্যা রয়েছে কিনা, তা দেখা হয়। এক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম তিন মাসে নষ্ট হচ্ছে, নাকি মাযের তিন মাসে নষ্ট হচ্ছে। বাচ্চার হার্টবিট আসছিলো কিনা। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চার নিজের দোষেই এমনটা হতে পারে। এখনও আমরা খুঁজে বের করতে পারি না এ বিষয়টি। যদি আপনার সবকিছু ভালো থাকার পরও এমন হয়, একজন ডাক্তারের চিকিৎসা নেবেন। প্রেগনেন্সিতে মিস পিরিয়ড হওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন। এজন্য আপনি প্রেগনেন্সি কনসিভ করার আগে থেকেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন।
ডক্টর টিভি: ৪০ বছর বয়সে সন্তান নিতে চাইলে কোনো সমস্যা আছে কিনা?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: আমরা জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। পাশাপাশি জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণতও করতে চাই।
সবকিছু মিলিয়ে আমাদের যে স্লোগানটা রয়েছে, দু’টি সন্তানই যথেষ্ট। একটি হলে আরো ভালো। দেখা যাচ্ছে, একজন মায়ের ৪০ বছর আগে দু’টি সন্তান হয়ে যায়। তাহলে তো আর প্রয়োজন নেই সন্তানের। কিন্তু বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তার সন্তানের প্রয়োজন হয়। মায়ের বয়সের সাথে সাথে কিছু জেনেটিক অসুস্থতা বাচ্চারও হওয়ার আশংকা থাকে।
এক্ষেত্রে বলতে চাই, প্রথমত আপনার যদি বাচ্চার প্রয়োজন হয়, বাচ্চা নেবেন। তবে বাচ্চার গঠনগত বা জেনেটিক সমস্যা থাকলে, সেক্ষেত্রে বাচ্চা যেন পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন বিষয়টা হলো, আমি কিভাবে জানবো আমার বাচ্চার জেনেটিক কোন সমস্যা হয়েছে। কিংবা কোন অসুস্থ বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে কিনা। ৪০ বছর বয়সে আপনারা বাচ্চা নিতে পারবেন। তবে এ ধরনের সমস্যাগুলো কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে মায়ের পেটে থাকার প্রথম তিন মাসে চিহ্নিত করা যায়। অনেকক্ষেত্রে জিওগ্রাফিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশনে এ ধরনের সমস্যাগুলো আমরা পরীক্ষা করে থাকি।
ডক্টর টিভি: বাচ্চার গঠন ঠিক আছে কিনা, সেটা জানার জন্য কি কি পরীক্ষা করতে হবে?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: এক্ষেত্রে বাচ্চা হবার পরে তো কোন পরীক্ষা করে লাভ নেই। এজন্য আমরা ১১ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে পারি। আগে আমরা এক্সপ্লাইনিং করাবো। স্ক্রিনিং টেস্ট যদি কনফার্ম হয়, তখন আমরা অন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাব। এক্ষেত্রে বাচ্চার কোনো বড় ধরনের অসুবিধা থাকলে সেটা দেখার সুযোগ হবে। ২২-২৪ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে।
ডক্টর টিভি: প্রেগনেন্সিতে থাকা অবস্থায় পেটে চাপ অনুভব করলে কি করণীয়?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: জরায়ুতে যখনই বাচ্চাটা বসে,তখনই জরায়ুতে মাঝে মধ্যে ফ্রেন্ডলিজ কনস্ট্রাকশন হয়।এটা হলে যে সবাই অনুভব করবে, তা কিন্তু নয়।অনেকেই অনুভব করে।এটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।যদি ব্যথা না হয়।এজন্য আমরা বলবো রেস্ট নিতে।হবে এলার্ট থাকতে হবে।তবে এটার ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রস্রাবে ইনফেকশন, পায়খানা না হওয়ার জন্যও হতে পারে।
ডক্টর টিভি: সিজার কয়বার করা নিরাপদ?
ডা. দীনা লায়লা হোসেন: যদি আপনার সুস্থ বাচ্চা থাকে। তাহলে দু’টি বাচ্চা সিজারে নিলে এটাই যথেষ্ট । বাচ্চা ছেলে না মেয়ে তার মধ্য দিয়ে কিন্তু সন্তানের সংখ্যা বাড়ানো যাবে না। হয়তো আপনার বাচ্চার সমস্যা রয়েছে অথবা আপনার এটা দ্বিতীয় বিবাহ। অথবা অটিস্টিক বাচ্চা। এসব কারণে যদি বাচ্চার প্রয়োজন হয়, তবে তিন থেকে পাঁচবার সিজার করা যায়।
তবে প্রতিবার সিজারের সাথে সাথে ঝুঁকিও কিন্তু বাড়ে। সিজার করলে সাধারণত কী হয়? একটা জায়গা কাটা হয়। বাচ্চাটাকে বের করা হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, দ্বিতীয় বাচ্চাটা যখন আসবে, জরায়ু যখন বড় হতে থাকবে, কাটা জায়গাটাতে টান পড়ে। তাই লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
বড় সমস্যা হলো জরায়ু ফেটে যায়। এক্ষেত্রে বাচ্চার জীবন যায়, মায়ের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। একবার সিজার হলে, পরবর্তী সিজারে ডেলিভারি আশঙ্কা বাড়ে। প্রথম বাচ্চা সিজারে ডেলিভারি হওয়ার পর, পরেরটাতে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি হওয়ার আশঙ্কা কমে। মায়ের সিজারের ক্ষেত্রে রক্ত নিতে হয়। রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন ঝুঁকি বাড়ে। সব থেকে বড় বিপদ হচ্ছে, গর্ভফুল। জরায়ুর মুখের দিকে বাচ্চা থাকে। জরায়ুতে ফুল থাকে।
সিজারের সময় দেখা যায়, কাটা জায়গাটায় ফুলটা বসে। মুহূর্তের মধ্যে অনেক রক্ত বের হয় মায়ের। তখন মাকে বাঁচানো অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই মায়ের আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হয়। অনেকেই ফিরে আসেন না আইসিইউ থেকে। এজন্য আপনাদের জন্য বলব, প্রয়োজন হলে বাচ্চা নিবেন।