অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিশু বিশেষজ্ঞদের ৪ দাবি
চার দফা দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশু বিশেষজ্ঞরা
জেনারেল পেডিয়াট্রিক্স (শিশু) ও পেডিয়াট্রিক সাবস্পেশালিটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দীর্ঘ পদোন্নতি জটের প্রতিবাদ এবং দ্রুত সময়ে অন্য ক্যাডারের মতো ইনসিটু/ওএসডি অ্যাটাচমেন্ট পদোন্নতির মাধ্যমে অন্তঃ ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ ৪ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশু বিশেষজ্ঞরা। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা সেবার এক অপরিহার্য অংশ শিশুস্বাস্থ্য। প্রতিটি উপজেলা, জেলা সদর এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকদের মাথাপিছু রোগীর চাপ অত্যন্ত বেশি। এরপরও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক যতগুলো পুরস্কার পেয়েছে তার অধিকাংশই শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে। এমনকি দেশের চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে যে অর্জন তার সবটুকু এসেছে শিশু সেবায় সময়োপযোগী আধুনিক চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধকারী ইপিআই টিকা প্রদানের সাফল্যের কারণে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে গুটিবসন্ত ও পোলিও নির্মূল হয়েছে।
তারা আরও বলেন, ২০২৩ সালে প্রায় ৩৬ লাখ ২ হাজার ৫০৯ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে হাসপাতালে জন্ম গ্রহণ করে ২৩ লাখ ৪০ হাজার ১৮২ জন শিশু। এ দেশের ২০১৭ সালে পাঁচ বছরের নিচের শিশু মৃত্যু ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন, কিন্তু ২০২২ সালে শিশু বিশেষজ্ঞদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তা কমে ৩১ -এ উন্নীত হয়েছে। ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্য হলো হলো ২৫।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজে সমন্বিত শিশু স্বাস্থ্যসেবা দেয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে আনুপাতিক হারে। পুরনো মেডিকেল কলেজগুলোতে বর্তমানে ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী আছে ও নতুন মেডিকেল কলেজগুলোতে ৫০ জন করে ছাত্রছাত্রী প্রতিবছর যোগ হয়। উপজেলা, জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হলেন জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্ট। সারা দেশে প্রায় ৬৩৮টি হাসপাতালে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেন শিশু ও নবজাতকসহ অন্য সাবস্পেশালিটির বিশেষজ্ঞরা। তাহলে এ বিশাল যজ্ঞ চালাতে মেডিসিন, সার্জারি ও অবস্ অ্যান্ড গাইনি বিষয়ের সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি চিকিৎসক শিশু সেবায় থাকা কার্যত যৌক্তিক। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। যুগ যুগ ধরে এ খাতে কর্মরত চিকিৎসকরা অবহেলিত।
এসময় তারা বৈষম্য নিরসনে চার দফা দাবি উপস্থাপন করেন। সেগুলো হলো-
১. পেডিয়াট্রিকস জুনিয়র কনসালটেন্ট, সিনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক পদে, মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনি অ্যান্ড অবসের সঙ্গে সাম্যতা আনয়ন করার জন্য ওএসডি অ্যাটাচমেন্ট/ইনসিটু পদোন্নতি প্রদান প্রয়োজন।
২. পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি ও পদায়ন ও প্রয়োজনে ওএসডি অ্যাটাচমেন্ট/ইনসিটু পদায়ন। উল্লিখিত সমস্যার সমাধান না করলে নিকট ভবিষ্যতে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হবে। এতে এ দেশের কোটি কোটি শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে, বাড়বে শিশু মৃত্যু যা এ দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে, দেশের উন্নতি ব্যাহত হবে।
৩. জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ শিশু হলেও সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ শিশু রোগীর জন্য বরাদ্দ। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে শিশু রোগীদের সংখ্যার অনুপাতে হাসপাতালে বিছানার সংখ্যা বর্ধিতকরণ ও চিকিৎসকদের জন্য নতুন পদসৃজন এবং ছাত্রছাত্রীদের অনুপাতে শিক্ষকদের পদসৃজন এবং পরবর্তীতে ইনসিটু পদোন্নতি প্রদানকারী চিকিৎসকদের সৃজন করা পদে আত্তীকরণ।
৪. ঢাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের সরকারি বিশেষায়িত ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব চাইল্ডহেলথ’ স্থাপন করা, যেখানে শিশু মেডিসিন, সাবস্পেশালিটি ও সার্জারির সমন্বিত চিকিৎসা প্রদান করা এবং উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রণয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, সদস্য সচিব ডা. মো. বেলায়েত হোসেন ঢালী, সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান (শিশু) অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইয়ামিন শাহরিয়ার চৌধুরী, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলামসহ অনেকে।