পেনশনের টাকা পাননি অধ্যাপক মবিন খান, ক্ষমা চাইলেন বিএসএমএমইউর ভিসি
বিএসএমএমইউর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় প্রয়াত অধ্যাপক ডা. মবিন খানের জানাযাপূর্ব বক্তব্য রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমা
বেঁচে থাকা অবস্থায় পেনশনের চেক হস্তান্তর করতে না পারায় প্রয়াত অধ্যাপক ডা. মবিন খান ও তার স্বজনদের কাছে ক্ষমা চাইলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাযাপূর্ব বক্তৃতায় আবেগতাড়িত ভাষায় ক্ষমা চান ভিসি।
অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, অধ্যাপক ডা. মবিন খান স্যার চাকরি জীবনে অত্যন্ত সৎ ছিলেন। তাঁকে অত্যন্ত মানবিক চিকিৎসক হিসেবে জেনেছি। বাংলাদেশের ফাদার অফ হেপাটোলজি খ্যাত অধ্যাপক ডা. মবিন খান জীবনের ৩৫টা বছর কর্মরত ছিলেন বিএসএমএমইউয়ে। তাঁর হাত ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হেপাটলজি বিভাগের যাত্রা শুরু। অথচ, স্যার এই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রায় ৭/৮ বছর অতিবাহিত হলেও পেনশনের টাকা বুঝে পাননি। বিএসএমএমইউর ভিসি হিসেবে আজ আমি, স্যারের লাশ সামনে রেখে ক্ষমা চাচ্ছি। এটা আমাদের চরম ব্যর্থতা। স্যারের স্বজনদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
বিএসএমএমইউর ভিসি আরও বলেন, মাত্র দু’মাস আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পেয়েছি। মবিন স্যারের মৃত্যুর আগে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছি। সেখানে তাঁর সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে এ বিষয়টা নিয়ে কথা বলি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁর পেনশনের কাগজপত্র হস্তান্তর করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্যার স্বাভাবিক (কনসার্ন) ছিলেন না। যে কারণে চেক হস্তান্তর সম্ভব হয়নি। বেঁচে থাকতে স্যারের হাতে পেনশনের চেক তুলে দিতে না পারায় তীব্র মনোকষ্টে ভুগছি।
জানাযা পূর্ব বক্তৃতায় অন্য বক্তারা বলেন, অধ্যাপক ডা. মবিন খান সর্বদা সহকর্মী ও রোগীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। লিভার বিষয়ে শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা ও গবেষণায় যে অবদান রেখে গেছেন, জাতি তা চিরদিন স্মরণে রাখবে। তিনি সৎ জীবনের অধিকারী ও ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তিনি মানুষের সমালোচনা পছন্দ করতেন না। জ্ঞান সাধনায় তিনি ছিলেন অতুলনীয় ও প্রচন্ড পরিশ্রমী।
জানাযায় অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন- প্রো-ভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ডিন অধ্যাপক ডা. মো. মোজাম্মেল হক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান, হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নুরুদ্দীন আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডীন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্ট শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ফাদার অফ হেপাটোলজি খ্যাত অধ্যাপক ডা. মবিন খান বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তিনি বার্ধক্যজনিত রোগ ছাড়াও ডায়াবেটিস ও পারকিনসন রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের চিকিৎসা অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রখ্যাত চিকিৎসক ও গুণী শিক্ষক অধ্যাপক ডা. মবিন খানের জন্ম ১৯৪৯ সালে। তিনি লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লিভার রোগ গবেষণায় তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মবিন খানকে কুমিল্লার কালীর বাজার এলাকার আনন্দপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বজনেরা।