মারা গেছেন ৬ বছর কোমায় থাকা ডা. কথা
২০২০ সালে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ডা. কথার স্বামী ডা. কমল লোদী
ছয় বছর কোমায় থাকা ডা. এ্যানী নতুনা দেওয়ান কথা মারা গেছেন। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) তার মৃত্যু হয়। নিজের ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুব কচি।
বগুড়া মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন ডা. কথা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ওমানে কর্মরত অবস্থায় দেশটিতে এক কার দুর্ঘটনায় আহত হন ডা. কথা। ওই দুর্ঘটনায় তার স্বামী একই ব্যাচের ডা. কমল লোদী আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
তবে ২০২০ সালে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একমাত্র মেয়ে ও ২০১৬ সাল থেকে কোমায় চলে যাওয়া স্ত্রী ডা. কথাকে রেখে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ডা. কমল।
ওই বছরের ৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে আগারগাঁও রেডিও স্টেশন এলাকায় ডা. কমল তার মেয়ের একটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে কাভার্ড ভ্যান ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।
ডা. কমল ও ডা. কথা ছাত্রজীবনে বিয়ে করেন। পাস করার পর কয়েক বছর ডা. কথা স্কয়ার হাসপাতালে চাকুরি করেন। ওমান সরকারের আমন্ত্রণে সরকারি হাসপাতালের চাকরি নিয়ে এ দম্পতি দেশটিতে যান।
কোমায় থাকা স্ত্রীকে সময় মতো ওষুধ খাইয়ে দেওয়া, লিকুইড খাবার দেওয়া, বিছানা পাল্টিয়ে দেওয়া, অজ্ঞান অবস্থাতেও বাড়তি কোনো জটিলতা দেখা দিলে সেটার আলাদা যত্ন নেওয়া, স্ত্রীর কাছে থেকে যা যা দরকার করতেন ডা. কমল। এভাবেই দেড় বছর ওমানে থাকার পর স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফেরেন এবং রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বসবাস করতেন।
ডা. মাহবুব কচি লিখেছেন, সেই ২০১৬ সালের এক্সিডেন্ট এর পর থেকে ডা. কথা কোমায় ছিলেন। দীর্ঘদিন ওমানে চিকিৎসারত ছিল, তারপর ওমানের হাসপাতাল কোমা অবস্থায় রিলিজ দিলে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ডা. কমল। বাংলাদেশেও বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন ডা. কথা। কিন্তু ওর আর কখনোই জ্ঞান ফিরেনি।
একজন কোমার রোগীকে তার স্বামী ডা. কমল যেভাবে সেবাযত্ন করেছেন, সেটি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না, এমনকি লিখেও কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে না। কমল কোমা অবস্থায় স্ত্রীর টয়লেট, গোসল, খাওয়া, সময়মতো পজিশন চেইঞ্জ করতেন। এজন্য কখনও ডা. কথার বেডশোর হয়নি।