লিভার ক্যান্সার
লিভার ক্যান্সার বিষয়ে লিখেছেন ডা. মো. তৌছিফুর রহমান
বর্তমান বিশ্বে ৫ম সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন সেটি হচ্ছে লিভার বা যকৃতের ক্যান্সার। ক্যান্সারসমূহের মধ্যে এটা ৩য় সর্বোচ্চ ক্যান্সার মৃত্যুর কারণ।
লিভারে ইনফেকশন হওয়ার পর থেকে ক্যান্সারে পরিণত হতে প্রায় কয়েক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
পুরুষ ও নারীর মধ্যে আক্রান্ত হবার অনুপাত ৫:১ দেখা যায়। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে লিভার ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। সাধারণত দেখা যায় যারা আক্রান্ত হন তাদের গড় বয়স ৫৩ বছর।
কারা আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে?
১। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস: যারা শরীরে এই ভাইরাস বহন করেন, তারা আক্রান্ত হবার উচ্চ ঝুকিতে আছেন। দেখা যায় যে সব অঞ্চল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রবণ সে সব এলাকায় লিভার ক্যান্সারের ৯০% ই হেপাটাইটিস বি পজিটিভ।
২। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস: এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আরও বেশি। তবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের তুলনায় এই ভাইরাসে কম মানুষ আক্রান্ত হন বলে সম্মিলিতভাবে লিভার ক্যান্সারের বেশির ভাগ রোগীই সাধারনত হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
৩। মদ্যপান: যারা অত্যাধিক মদ্যপান করেন তাদেরও উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
বাঁচার উপায়ঃ
* নিয়মিত স্ক্রিনিং করতে হবে: যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন তারা ৪০ বছরের পর থেকে নিয়মিত স্ক্রিনিং করবেন। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শারীরিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসনো, আলফা ফিটোপ্রোটিন পরীক্ষা করতে হবে ও নিয়মিত ফলোআপন করতে হবে।
* যারা ফ্যাটি লিভার আক্রান্ত তারা শর্করা, তেল, চর্বি জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করবেন। বেশি করে সবুজ শাক-সবজি ফলমূল খাবেন। তাছাড়া নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। প্রতিদিন ৩০মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিনে ১৫০ মিনিট ঘাম ঝরানো পরিশ্রম/ হাটাচলা করতে হবে। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
উপসর্গসমূহঃ
১। শারীরিক ওজন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, জ্বর ও ক্ষুধামন্দা।
২। উপর পেটে ব্যাথা যা সবসময় থাকে কিন্তু খুব তীব্র নয়।
৩। পেট ফুলে যাওয়া, শরীর হলুদ হয়ে যাওয়া, পেটে চাকা অনুভূত হওয়া।
সনাক্তকরণের প্রক্রিয়াঃ
প্রথমত লক্ষণ অনুযায়ী শারীরিক পরীক্ষা তারপর ল্যাবরেটরী ও অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। যার মধ্যে অন্যতম
* Alpha Fetoprotein
* Hepatitis B & C
* Abdominal Ultrasonography
* Guided Biopsy/FNAC
* Triple Phase CT Scan Or Contrast MRI
* Liver Function Test
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
* সার্জারী
* কেমোথেরাপী
* রেডিওথেরাপী
* টার্গেটেড থেরাপী
* ক্রায়োথেরাপী
* রেডিওফ্রিকোয়েন্সী অ্যাবলেশন
* Trans Arterial Chemo-embolisation
লিভার ক্যান্সার একটি সহজ প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সার। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয় বললেই চলে।
কোনো মানুষেরই লিভার ক্যান্সারে মৃত্যু কাম্য নয়। আসুন নিজে সচেতন হই, পরিবার ও সমাজকে সচেতন করি। আমার আপনার সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দূর হোক লিভার ক্যান্সার চিকিৎসার সকল অন্তরায়।
পরামর্শ দিয়েছেন
টিউমার ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
ডা. মো. তৌছিফুর রহমান
এমবিবিএস (শসোমেক), সিসিডি (বারডেম), এমডি (অনকোলজি)
সহকারী অধ্যাপক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, বগুড়া
চেম্বারঃ ইবনে সিনা কনসালটেশন সেন্টার,কানজগাড়ী, বগুড়া