এরকম শিক্ষক যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে
অধ্যাপক ডা. মানবেন্দ্র ভট্টাচার্যের সাথে অধ্যাপক ডা. মহসিন খলিল (ইনসেটে : লেখক)
নাইট শিফটে ডিউটি করতে গেছি। মহসিন খলিল স্যার আমাদের নিউরোলজি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। ভাবলাম একটু স্যারের সাথে দেখা করে আসি। আমি স্যারের সরাসরি ছাত্র নই। একজন শিক্ষক বেচে থাকেন ছাত্রদের মাঝে। সে হিসাবে স্যার একজন কিংবদন্তি শিক্ষক। ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্রদের স্যারকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস তা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
-তুমি এম কত?
-স্যার আমি রংপুর মেডিকেলের। এম-৪৫ এর করেসপন্ডিং।
-রংপুরে এনাটমিতে কাকে পেয়েছো?
-আফরোজা বুলবুল ম্যাডাম...
বলতে বলতে মনে পড়ে গেলো অনেক কথা। আফরোজা বুলবুল নাম শুনলে ভয় ও শ্রদ্ধার এক হিমশীতল অনুভূতি চলে আসে। ম্যাডামের একচ্ছত্র রাজত্ব তখন রমেকে। তার কথায় সিনিয়র জুনিয়র সবাই শ্রদ্ধাভরে নিরব হয়ে যেতো। তখন এনাটমিতে তিনজন বড় ম্যাডাম।
আমি তখন মেডিকেলের একটা মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করি। আমাদের একটি সংবাদ এনাটমি বিভাগের বিপক্ষে যায়। আমিসহ তিনজনের ডাক পড়ে বিভাগীয় প্রধানের রুমে। এনাটমির সব স্যার ম্যাডামের সামনে ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতা। ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র হিসেবে এই ঝড়ের পর যখন জিয়া হোস্টেলের হক মামার ডাইনিং এ খেতে ঢুকেছি তখন সবাই কেমন কেমন করে তাকাচ্ছিল।
পরের মাসে এনাটমি বিভাগে পত্রিকাটির পরের সংখ্যা দিতে কেউ যেতে রাজি হচ্ছিল না। আমি নিজে গেলাম। সালাম দিয়ে ম্যাডামের রুমে ঢুকলাম। ম্যাডাম হেসে সালামের উত্তর দিলেন। পড়াশোনা করো, পরীক্ষায় এসবের কোন প্রভাব পড়বে না। অভয় পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এনাটমি ভাইভাতে প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় অনেক নাম্বার পেয়েছিলাম।
অধ্যাপক (ডা.) আফরোজা বুলবুল ম্যাডাম আমার দেখা অন্যতম সেরা শিক্ষক। সকাল ৭টায় তার ক্লাসে উপস্থিতি ছিল প্রায় শতভাগ।
এরকম একেকজন শিক্ষক যুগ যুগ ধরে বেচে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে।
[ছবিঃ আমাদের বিভাগীয় প্রধান ডা. মানবেন্দ্র ভট্টাচার্য স্যারের সাথে অধ্যাপক (ডা.) মহসিন খলিল স্যার]
লেখক :
ডা. মো. তরিকুল হাসান
কাওরাইদ, গাজীপুর।