একটা সরকারী হাসপাতালের গল্প
গত এক বছরে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার রোগীর সেবা দিয়েছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগ
সেন্ট্রাল হাসপাতাল নিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা একটি জঘন্যতম ব্যবস্থপনার পরিচয় তুলে ধরেছে। তুলে ধরেছে যে বাঙ্গালীরা ব্যবসা করতে গিয়ে নীতি কি করে বর্জন করে।
অথচ আজ একটা সরকারী হাসপাতাল এর গল্প বলবো, গল্প বলবো একদল চিকিৎসকের কথা যারা শুধু মাত্র দুইটি আউটডোর রুম নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
জানি এই কথা কেউ বলবে না, জানি এ লেখা কেউ পড়বে না, জানি শেয়ারও করবে না। তারপরও লিখছি…
মাত্র দুইটি রুম তাও বহির্বিভাগের। সেই রুমে বসে গত এক বছরে তারা ১ লক্ষ ৮৭ হাজার রোগীর সেবা দিয়েছে। অপারেশন করেছে প্রায় এক হাজার রোগীর। মনে হতেই পারে বিশাল এই সংখ্যক মানুষের সেবা দেওয়ার জন্যে বিশাল সংখ্যক চিকিৎসক দল আছে। হুম আছে হাতে গোনা মাত্র ৬ জন। মাত্র এই ৬ জন দিয়ে চলছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিকের কার্যক্রম।
আমি গত দেড় বছর ধরে অর্থোপেডিক সার্জারীর যে অংশ টা ০ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সের রোগীদের জন্মগত হাড়ের সমস্যা ও হাড় ভাঙ্গার চিকিৎসা দেওয়া হয় তার সাথে কাজ করে আসছি। আমার কর্মস্থল জাতীয় অর্থোপেডিক হাসাপাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে এবং ব্যক্তিগতভাবে হেল্থ এন্ড হোপ হাসপাতাল অধ্যাপক Romel Sarwar স্যারের নেতৃত্বে।
গত দেড় বছরে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর এ ক্যাম্পে গিয়েছি, গিয়েছি কম্বাইন্ড মেলেটারি হসপিটাল যাকে আমরা CMH বলে জানি। সে হিসেবে আজ গেলাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
সেবা গ্রহীতার এ বিশাল সংখ্যক রোগীদের মধ্যে পেডিয়েট্রিক অর্থোপডিকের রোগী থাকলেও জটিল অপারেশনগুলো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে। যেখানে পেডিয়েট্রিক অর্থোপেডিক ইউনিটে কাজ করছেন সহকারী অধ্যাপক Quazi Shahid-ul Alam Boby স্যার। নতুবা আমার হাসপাতালে আমার ইউনিটে আর তাতে কাজের লোড বেড়ে যায়।
সূত্র মতে আমার ইউনিটে অপারেশনের জন্যে চলমান সিরিয়াল ১৪৭০ আর আমরা প্রায় ৭০০ জন রোগীর অপারেশন করতে পেরেছি।
সেই লোড কমানোর জন্যে কুর্মিটোলায় পেডিয়েট্রিক অর্থোপেডিক এর জটিল অপারেশন করা দরকার। আর তা শুরু করার জন্যে আজ গেস্ট সার্জন এর সদস্য হিসেবে সেখানে যাই। Mohammad Asif একজন চৌকস অর্থোপেডিক সার্জন, কুর্মিটোলা হাসপাতালের ডাক্তার এবং যে কিনা আমাদের হেল্থ এন্ড হোপ হাসপাতাল এর পেডি অর্থো টীমের একজন সক্রিয় সদস্য… তার উদ্যমতায় আজকে আমরা সেখানে জটিল অপারেশন করতে যাই।
উষ্ণ আপ্যায়ন এবং অতিথেয়তায় আমরা মুগ্ধ। এবং সেই সাথে এই হাসপতালে এই বিশেষ সেবা চলমান থাকবে তাই আমাদের কাম্য।
পরিশেষে একটাই বলব, একদিকে সেন্ট্রাল হাসাপাতালের মত বিভিন্ন হাসপাতলে যদি দুনীর্তি মূলক ব্যবস্থাপনা থেকে থাকে। অন্যদিকে কোভিডের সময় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মত হাসপাতালে ও সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনাও আছে। পার্থক্য একটাই ব্যবস্থাপনার নীতি ও মানসিকতা।
লেখক :
ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াৎ তাসফিন
রেজিষ্ট্রার, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান